আমাদের সমাজে শিশুদের বেড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মাসহ পরিবারের
বড়দের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। যাদের সহযোগিতায় একটি শিশু আগামী দিনের
সুস্থ, বুদ্ধিদীপ্ত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
শৈশব হচ্ছে অবারিত আনন্দে বেড়ে ওঠার সময়। এ সময় শিশুরা সাধারণত বড় হয় বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে, বেড়ে ওঠে দুজনার আদর-স্নেহ ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। প্রতিটি শিশুর কাছেই রয়েছে বাবা-মায়ের সমান গুরুত্ব। শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কার্যকর সহযোগিতা ছাড়া শিশুর সুষ্ঠু প্রারম্ভিক বিকাশ সম্ভব নয়।
মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়ার পর থেকেই শিশুরা দ্রুত শিখতে শুরু করে। যখন একটি শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি যথাযথ স্বাস্থ্য পরিচর্যার পাশাপাশি আদর মনোযোগ আর শেখার উদ্দীপনা পায় তখন সে আরো তাড়াতাড়ি শেখে। দেখে, শুনে, ছুঁয়ে, গন্ধ নিয়ে এবং স্বাদ নিয়ে শিশুরা তার চারপাশের পৃথিবীকে আবিষ্কার করে চলে। শিশুর জন্মের মুহূর্ত থেকেই এসব ইন্দ্রিয় কাজ করতে থাকে।
শিশুরা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুস্থ, সবল, উৎসাহী, আগ্রহী এবং পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন কাজ করার জন্য দক্ষ হয়ে উঠতে যে প্রস্তুতির প্রয়োজন, তা শিশুর জীবনের প্রথম আট বছর বয়সের মধ্যে প্রধানত হয়ে থাকে। জীবনের প্রথম আট বছর শিশুর জন্য সংকটপূর্ণভাবে গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে প্রথম তিন বছর। এই সময়েই শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি এবং বিকাশের ভিত্তি রচিত হয়। এ সময়কালে শিশুরা অন্য যেকোােন সময়ের তুলনায় অনেক দ্রুত শেখে।
ছোট্ট শিশুরা যদি স্নেহ-ভালোবাসা, মনোযোগ, উৎসাহ ও মানসিক উদ্দীপনা পায় এবং সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা লাভ করে তাহলে শিশুদের বিকাশ সঠিক দ্রুত হয় এবং তারা বেশি তাড়াতাড়ি শিখতে পারে। প্রথম বছরগুলোর যতœ ও স্নেহ-মমতা শিশুকে প্রফুল্ল করে তোলে। শিশুকে ধরলে, আদর-সোহাগ করে বুকে বা কোলে নিয়ে তার সঙ্গে কথা বললে শিশুর বেড়ে ওঠার উদ্দীপনা পায় এবং তার আবেগ অনুভূতির দ্রুত বিকাশ ঘটে। শিশু মায়ের শরীরের স্পর্শ পেলে এবং চাওয়া মাত্রই শিশুকে বুকের দুধ দিলে শিশুর ভেতরে নিরাপত্তা বোধ জন্মে। পুষ্টির চাহিদা মেটানো ও আরাম বোধ উভয় কারণেই শিশুর স্তন্য পান প্রয়োজন।
শিশুদের সঙ্গে কথা বললে, তাদেরকে স্পর্শ করলে, আদর-সোহাগ করে জড়িয়ে ধরলে তাদের মানসিক বিকাশ দ্রুত ঘটে। পরিচিত মুখ দেখলে, পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনলে এবং বিভিন্ন বস্তু নাড়াচাড়া করলেও তাদের দ্রুত মানসিক বিকাশ ঘটে। জন্মের পর থেকে ভালোবাসা পেলে ও নিরাপত্তা অনুভব করলে, বেশি খেলাধুলা করলে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা ও ভাব বিনিময় হলে তারা দ্রুত শিখতে পারে। শিশুরা নতুন নতুন খেলনা দিয়ে খেলতে ভীষণ পছন্দ করে।
শিখতে, খেলতে ও তার চারপাশ চিনে নিতে উৎসাহ দিলে শিশু শেখে এবং তার মানসিক, সামাজিক, অনুভূতিগত, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটে। খেলাধুলা শিশুদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের কৌতূহলী ও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। খেলার মধ্য দিয়ে শিশুর ভাষা, চিন্তা, পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বিকশিত হয়।
অনেক পরিবারেই মেয়ে শিশুর প্রতি পরিবারের সদস্যদের কম মনোযোগ ও কম যতœ-বৈষম্যের সৃষ্টি করে। কিন্তু মেয়ে শিশু ও ছেলে শিশুর মধ্যে দৈহিক, মানসিক ও আবেগ অনুভূতিগত প্রয়োজনে কোনো পার্থক্য নেই। ছেলে শিশুর মতো মেয়ে শিশুরও একই রকম খাদ্য, মনোযোগ, স্নেহ ও যতœ দরকার। তাই মেয়ে শিশুর প্রতি কোনো বৈষম্য করা যাবে না। কারণ উপযুক্ত খাবার, সেবাযতœ ও স্নেহ-মমতা পেলে মেয়ে শিশুটিও যেকোনো ছেলে শিশুর মতো ভালো কিছু করতে বা হতে পারবে।
Post a Comment